বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫
অনুসন্ধানী রিপোর্ট

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ৪৩ কোটি টাকা আটক এশিয়াটিকের আইপিও-তে

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য অনুমোদন পাওয়ার পর এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের প্রাথমিক পাবলিক অফার (আইপিও) শেয়ারের জন্য বুক-বিল্ডিং পদ্ধতির মাধ্যমে বিড করেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। পরবর্তীতে গেলো জানুয়ারি মাসে কোম্পানিটির আইপিও স্থগিত করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরফলে বিড করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৪৩ কোটি টাকা কোম্পানিটির অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে আছে। এখনও সেই টাকা ফেরত পায়নি প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিডিংয়ে অংশ নেওয়া ৯২ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর প্রায় ৪৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অ্যাকাউন্টে প্রায় এক বছর ধরে আটকে আছে বলে জানা গেছে।

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ারের কাট-অফ মূল্য নির্ধারণের জন্য নিলাম ২০২২ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হয়। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সেই সময়ে বিডিং প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য ডিএসই-এর অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা করে। এরপর ডিএসই এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে। সিকিউরিটিজ রেগুলেটর এই বছরের জানুয়ারিতে কোম্পানিটির আইপিও সাবস্ক্রিপশন প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেয়।

এই বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, কোম্পানির আইপিও স্থগিত হওয়ার পর এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের অ্যাকাউন্টে তাদের আমানত আটকে যাওয়ার পরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বিনিয়োগকারীদের কাছে যদি সেই অর্থ থাকত, তবে শেয়ারবাজারের ক্রান্তকালে তা বিনিয়োগ করতে পারতো। এতে নিজেদের এবং পুঁজিবাজার উভয়েরই লাভ হতো। কিন্তু এখন তারা তা করতে পারছে না।

তিনি আরও বলেন, বিএসইসি আইপিও সাবস্ক্রিপশন আটকে রেখেছে, তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। শেয়ারবাজারে মন্দার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ ফেরত পেতে আগ্রহ প্রকাশ করছে।

বুক-বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ডিএসইর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়ে আইপিও শেয়ারের জন্য বিডিং প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। ডিএসই সফল দরপত্রদাতাদের অনুকূলে শেয়ার বরাদ্দ দেয়। অন্য দর দাতাদের টাকা ফেরত দেয়।

বিনিয়োগকারীদের অর্থ তখন কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হয়। কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পরে তার প্রসপেক্টাসে নির্ধারিত জায়গায় এটি ব্যয় হিসেবে উল্লেখ করতে পারে।

কেন আইপিও সাবস্ক্রিপশন আটকে রয়েছে

গত ১৫ জানুয়ারী বিএসইসি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের আইপিও শেয়ারের ইলেকট্রনিক সাবস্ক্রিপশন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছে।

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরির বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল কোম্পানির স্থায়ী সম্পদের অতিরিক্ত বিবরণী এবং এর মালিকানা নিয়ে বিরোধ। সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিষয়গুলি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু তারা আইপিও সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়নি।

ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) দেখেছে যে, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিগুলি তার সম্পত্তির মূল্যকে বৃদ্ধি করে দেখিয়েছে।

শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কোম্পানিটির শেয়ারের বেশি মূল্য পাওয়ার লক্ষ্যে সম্পত্তির মূল্য বেশি দেখিয়েছে। এফআরসি তার ফলাফল বিএসইসিতে জমা দিয়েছে।

গত বছরের আগস্টে, সিকিউরিটিজ রেগুলেটর এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজকে বুক-বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিওর মাধ্যমে ৯৫ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমতি দেয়। কোম্পানিটি আইপিও’র এই অর্থ ক্যান্সার প্রতিরোধী ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহার করবে বলে জানিয়েছিল। ৯৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫৮ কোটি ০৫ লাখ টাকা যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্থাপন, ৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা কারখানা নির্মাণ এবং ২৮ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যয় করবে।

এর আগে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেমের মাধ্যমে একটি দরপত্রে কোম্পানির শেয়ারের কাট-অফ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০ টাকা। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিএসইসির নিয়ম অনুযায়ী ২০ টাকায় সেই শেয়ার পাওয়ার কথা ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *