সোমবার, মার্চ ১৭, ২০২৫
অর্থনীতি

সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়ছে

সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া এখন থেকে পেনশনার সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীদের প্রতি মাসে সুদের টাকা দেওয়া হবে। এর আগে তারা ৩ মাস পর পর সুদ বা মুনাফার টাকা পেতেন।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।

একই সঙ্গে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডসহ সঞ্চয় অধিদপ্তর পরিচালিত ১১টি সঞ্চয় স্কিমের বিনিয়োগগুলো মেয়াদ শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃবিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে। ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সভা সূত্রে জানা গেছে।

বর্তমানে ব্যাংকগুলো স্থায়ী আমানতে ৯ থেকে ১১% সুদ দিচ্ছে। তবে কোনো কোনো ব্যাংক ১৩% পর্যন্ত স্থায়ী আমানতে সুদ দিচ্ছে। বর্তমানে ৩ মাস মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দেওয়া হচ্ছে ১১.০৪%, পূর্ণ মেয়াদে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১.৫২%, ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১.২৮%, পেনশন সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১.৭৬%।

কয়েক বছর আগেও ব্যাংক আমানতের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে অনেক বেশি মুনাফা দেওয়া হতো। বাজেটের ঘাটতি মেটাতে বাড়তি অর্থায়নে উৎসাহ দিতে ব্যাংক আমানতের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদ হারে সামঞ্জস্য আনতেই সুদহার বাড়ানো হচ্ছে।

বর্তমানে মেয়াদ শেষে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের অর্থ সুদাসলে তাদের অ্যাকাউন্টে ফেরত দেয় সরকার। আইএমএফের চাপ ও অধিক সুদ ব্যয়ের কারণে গত কয়েক বছর ধরে সরকার জনগণের জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করছিল। কিন্তু রাজস্ব আহরণ কমে যাওয়ায় এবং ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়া কমাতে আবারও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ কমিয়েছে। এ বছর সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক ৩ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৮,০০০ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ঋণাত্মক ৭,৩১০ কোটি নির্ধারণ করা হয়।

একইভাবে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের অর্থও সুদাসলে ফেরত দেওয়া হয়। ডলার সংকটের কারণে কোনো কোনো ব্যাংক এসব বন্ডে বিনিয়োগকারীদের সুদাসল বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে বলে জানা গেছে।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ সচিব আব্দুর রহমান খান জানান, “এতদিন ধরে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীরা ৩ মাস অন্তর অন্তর সুদ বা মুনাফার টাকা পেতেন। এখন থেকে প্রতি মাসে তাদের মুনাফার অর্থ দেওয়া হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশি মেরিনার, পাইলট ও কেবিন ক্রুরা এতদিন ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ পেতেন না, সভায় তাদের এই বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

জানা গেছে, বর্তমানে সঞ্চয় অধিদপ্তর ১১টি সঞ্চয় স্কিম পরিচালনা করছে। এসব স্কিমে বিনিয়োগকারীদের অর্থ মেয়াদ শেষে ফেরত দেওয়া হয়। যারা আবারও বিনিয়োগ করতে চান, তাদের নতুন করে আবার বিনিয়োগ করতে হচ্ছে।

তবে নতুন সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এখন থেকে মেয়াদ শেষে বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করা অর্থ প্রত্যাহার করে না নিলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃবিনিয়োগ হবে। একইভাবে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের বিনিয়োগও মেয়াদ শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃবিনিয়োগ হবে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের এমন একজন কর্মকর্তা জানান, সভায় পেনশনার সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রের সুদহার পুনঃনির্ধারণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ড্যাশবোর্ড প্রস্তুত করা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে কমিশন হার পুনঃনির্ধারণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *