পুঁজিবাজার থেকে ২ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে ৫১টি প্রতিষ্ঠান

মহামারী করোনায় ২০২০ সালে মাত্র ৮টি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এরপর ২০২১ সালে ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করা হয়। তবে পরের বছর ২০২২ সালে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করা হয়।

আর চলতি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হয়েছে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান। এসব কোম্পানি বাজার থেকে তুলেছে মাত্র ৮৬ কোটি টাকার মূলধন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে সেকেন্ডারি বাজারের সঙ্গে স্থবিরতা নেমেছে প্রাইমারি বাজারেও।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, গত দেড় বছরে পুঁজিবাজার একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সময়ে লেনদেন ও সূচকসহ সবকিছুই একটি নির্দিষ্ট স্তরে ওঠানামা করছে। এছাড়া ফ্লোর প্রাইসের কারণে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। ফলে সেকেন্ডারি মার্কেট একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে থাকে; যা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করছে না। আর বিনিয়োগকারীরা আইপিওকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন না।

বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কমিশনে প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড নামে একটি বীমা কোম্পানির আইপিও আবেদন জমা পড়েছে। কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে ১ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে ১৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে।

এছাড়া বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসতে চায় বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ৩৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করতে চায়। কিন্তু কোম্পানিটির আইপিও প্রক্রিয়ায় ক্রটি থাকার কারণে সংশোধন করে পুনরায় আবেদন করতে বলা হয়েছে।

বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ৪৯টি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ কোম্পানি ২০২১ সালে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। এবং ২০১৮ সালে, ১৩টি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। এবং বর্তমান ২০২৩ স্টক মার্কেটে মাত্র দুটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে; যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

২০১৮ সালে, ১৩টি কোম্পানি বাজার থেকে ৫৪৬ কোটি টাকা তুলেছে। কোম্পানিগুলো হলো- কুইন সাউথ টেক্সটাইল, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, বসুন্ধরা পেপার মিলস, এসকে স্টিম অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, আমান কটন ফাইবারস, ভিএফএস থ্রেড ডাইং, এমএল ডাইং, সিলকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, কাট্টালি টেক্সটাইলস এবং জিএসএস স্টিলেন্স। ইনফোসিস। লিমিটেড

২০১৯ সালে ৮টি কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে ৫৫২ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো- স্কয়ার নিটিং কম্পোজিটস, রানার অটোমোবাইলস, নিউ লাইন ক্লোথিং, সিলকো ফার্মাসিউটিক্যালস, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড, রিং শাইন টেক্সটাইল এবং এডিএন টেলিকম।

২০২০ সালে ৮টি কোম্পানি ৯৮৫ কোটি ৮৭ লাখ ২৩ হাজার ৩৪০ টাকা উত্তোলন করেছে। কোম্পানিগুলো হলো এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ, অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন, ডমিনেন্স স্টিল বিল্ডিং সিস্টেমস, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, রবি আজিয়াটা, এনার্জি প্যাক জেনারেশন এবং মীর আখতার হোসেন লিমিটেড।

২০২১ সালে, ১৪টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাজার থেকে ১ হাজার ২৩৩ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার ৪০ টাকার শেয়ার তুলে নিয়েছে। এগুলো হলো- তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম, ই-জেনারেশন, লুব-রেফ (বাংলাদেশ), এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, সাউথ বেঙ্গল এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সেনা। কল্যান। বীমা, এসিএমই পেস্ট্রিসাইডস, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, বিডি থাই ফুড অ্যান্ড বেভারেজ এবং ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড।

২০২২ সালে মোট ৬টি কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে ৬২৬ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার ৬০ টাকা সংগ্রহ করেছে। এগুলো হলো জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।

২০২৩ সালের চলতি মাসে দুটি কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো- মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড এবং ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। দুটি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজার থেকে ৭০ ও ১৬ কোটি টাকাসহ মোট ৮৬ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে।

আইপিওর সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, “কোভিড-পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অনেক কোম্পানি লোকসানের মুখে পড়েছে। ফলে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির শর্ত পূরণ করতে পারছে না। যার কারণে নতুন আইপিও আবেদন। অনেক কমে গেছে।যা আসছে সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে কমিশন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।